খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ পৌষ, ১৪৩১ | ৬ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  নড়াইলে পিকআপ ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে পিকআপ চালক নিহত, আহত ২
  চিকিৎসার জন্য আগামীকাল লন্ডন যাবেন খালেদা জিয়া : ফখরুল; কাতার আমিরের পাঠানো ‌‌’বিশেষ এয়ার এম্ব্যুলেন্স’ বিমানে যাবেন তিনি

সুন্দরবনে দস্যুতার সঙ্গে বাড়ছে হরিণ নিধন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

গত ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনে উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে ডাকাতি, অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি, চাঁদাবাজি ও চোরাকারবারীদের অপতৎপরতা। একই সাথে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরা হরিণ শিকারীরা। ক্ষেত্র বিশেষ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হরিণ শিকারে মেতেছে তারা।

এদিকে, বন বিভাগ বলছে, সুন্দরবনে হরিণ শিকার বন্ধে বন বিভাগের সদস্যরা তৎপর রয়েছে। তথ্যদাতা, উদ্ধারকারী, আসামি ধরিয়ে দেওয়া ছাড়াও লোকালয়ে আসা হরিণ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এছাড়াও হরিণ সুরক্ষায় সুন্দরবনে বন বিভাগের রয়েছে চারটি কেল্লা (বিশেষভাবে তৈরি করা হরিণের আবাসস্থল)। তবে, হরিণ শিকারীদের ধরতে দ্রুতই পরিচালিত হবে যৌথ অভিযান।

বনবিভাগ সূত্র জানায়, সুন্দরবনে মায়া হরিণ ও চিত্রা হরিণ নামে দুই প্রজাতির হরিণ পাওয়া যায়। মায়া হরিণের সংখ্যা কম, চিত্রা হরিণের সংখ্যা বেশি। হরিণ বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়।

সূত্রটি আরো জানায়, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন বিভাগের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ২০ জনহরিণ শিকারী। পলাতক রয়েছেন চারজন। এক বছরে ৯৫ কেজি ৫০০ গ্রাম হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চার মাস ২৫ দিনে ৭৮ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়। এ ছাড়া গত এক বছরে একটি মৃত হরিণ, এক পিস হরিণের চামড়া, ১ হাজার ৫০০ পিস হরিণ মারার ফাঁদ, ৫০০ গ্রাম কলিজা জব্দ করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল কয়েকজন জেলে ও মৌয়ালী জানান, গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে অনুপ্রবেশ কঠোর হস্তে দমন করা হয়। এ সময় শিকারীরা অনেকেই অন্য পেশায় চলে যায়। তবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় বিশেষ করে বনবিভাগ, কোস্ট গার্ড ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় শিকারীরা আবারো বনে ঢুকতে শুরু করেন। এদের মধ্যে অনেকে রয়েছে বনদস্যু। মাঝে মাঝে শিকারীরা গ্রেপ্তার হওয়ার পাশাপাশি হরিণের মাংস ও ফাঁদ উদ্ধার করা গেলেও বড় সংখ্যক শিকারী রয়ে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

স্থানীয়রা বলছেন, হরিণের মাংসের ক্রেতার অভাব নেই। হরিণের মাংস এখন হোম ডেলিভারিও করা হয়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা জনপতিনিধি ও খোদ প্রশাসনের লোকজনও এই মাংসের ক্রেতা। সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় বসবাস করা ধনী পরিবার ও রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ির ফ্রিজে প্রায় সব সময়ই হরিণের মাংস পাওয়া যায়। সম্প্রতি গত ২৬ ডিসেম্বর বনবিভাগ গাবুরার চকবারা গ্রামের সবেদ আলী গাজীর ছেলে ইয়াসিন গাজীর বাড়ির ফ্রিজ থেকে তিন কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জেল ভেঙে পালিয়ে আসা কয়েদি ও চিহ্নিত আসামিরা সুন্দরবনে দস্যুতা ও হরিণ শিকার শুরু করেছে। তাদের মধ্যে একটি অংশ সুন্দরবনের ভারতের অংশে পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া থানা থেকে লুট হওয়া সরকারি ও জনগণের লাইসেন্স করা বন্দুক নিয়ে তাঁরা সুন্দরবনে মৎস্য আহরণে যাওয়া জেলেদের কাছ থেকে মাছ, টাকা, মুঠোফোনসহ সবকিছু লুট করে নিচ্ছেন। এমনকি বনে ঢুকলে জেলেদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের চাঁদাও দাবি করছেন।

একটি সূত্র বলছে, তারা (বনদস্যুরা) খাদ্য হিসেবে হরিণ শিকার করছে। এছাড়াও সুন্দরবনে জেলেদের ছদ্মবেশে পুরনো বন্যপ্রাণী চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা আবারো বন্যপ্রাণী নিধনের মহোৎসব শুরু করেছে।

সন্দরবন গবেষক পীযুষ বাউলিয়া পিন্টু জানান, বন্যপাণী শিকার নিষিদ্ধ হলেও আইন অমান্য করে হরিণ শিকার করছে একটি চক্র। সুন্দরবনে দস্যুতার সাথে সাথে ফাঁদ পেতে ও গুলি করে হরিণ শিকার বেড়েছে। এভাবে অবাধে শিকার হলে সুন্দরবনে বাঘ-হরিণের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে উল্লেখ করে পীযূষ বাউলিয়া পিন্টু আরো জানান, সংঘবদ্ধ চোরা শিকারীরা ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে। আবার গুলি ছুড়েও শিকার করে। পরে মাংস ও চামড়া সুন্দরবনসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে। প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দাপটে জেলেরা বনের ভেতরে ঢুকে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার করছে। এতে শুধু মাছ নয়, প্রায় সব জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ মশিউর রহমান জানান, সুন্দরবনের হরিণ শিকার বন্ধ ও বনদস্যুদের তৎপরতা রোধে ও বনজীবীদের নিরাপত্তায় বন বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। সুন্দরবন সুরক্ষায় খুব শীঘ্রই বন বিভাগ, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি যৌথ অভিযান পরিচালনা করবে।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!